তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন,বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনা, পারে শুধু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে, বিএনপির কতটুকু শক্তি আছে আমাদের জানা আছে। রাজনীতির নামে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে আমরা দিতে পারি না। সারাদেশে পদযাত্রার উদ্দেশ্য হলো অগ্নি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা।
তিনি বলেন, ২০১৩-১৪ ও ১৫ সালে যারা অগ্নি সন্ত্রাস করে এতদিন আত্মগোপনে ছিল তাদেরকে আবার গ্রামেগঞ্জে এনে আবার অগ্নি সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে সমগ্রদেশে পদযাত্রার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। ঈদের পরে শীতের পরে গ্রীস্মের পরে যখন আম পাকে কিংবা বার্ষিক পরীক্ষার পরে আন্দোলন করতে করতে তাদের ১৪ বছর কেটে গেছে।
শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রামের হাটহাজারি উপজেলার ফতেপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ফতেপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ফতেপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এডভোকেট মোহাম্মদ শামীমের সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, বিশেষ অতিথি ছিলেন সাধারন সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন,বিএনপির কাজ হচ্ছে দিনের বেলায় পদযাত্রা রাতের বেলায় এম্বেসি যাত্রা। রাতের বেলা বিভিন্ন এম্বেসিতে গিয়ে কূটনীতিকদের হাতে পায়ে ধরে পদলেহন করেন, এই হচ্ছে তাদের কাজ। এদেশে কোন কূটনীতিক কাউকে ক্ষমতায় বসাতে পারে নাই, পারবেওনা। এই দেশের ক্ষমতার মালিক জনগণ। আমরা জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করি, আওয়ামী লীগ সব সময় জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করেছে। আগামী নির্বাচনেও জনগণের রায় নিয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আবার সরকার গঠন করবে।
তিনি বলেন, বিএনপি বুঝতে পেরেছে আগামী নির্বাচনেও তাদের কোন সম্ভাবনা নাই, তাই তাদের নির্বাচন ভীতি পেয়ে বসেছে। একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায় বিএনপি’র সম্ভাবনা কতটুকু। ২০০৮ সালে সমগ্র বিশ্ব স্বীকৃত একটি ভালো নির্বাচনে বিএনপির আসন মাত্র ২৯টি, আর উপনির্বাচনে ২টি বেড়ে ৩১ টি হয়েছে। ২০১৪ সালে নির্বাচনে পরাজয় জেনে নির্বাচন থেকে পালিয়ে গেছে। ২০১৮ সালে ডান-বাম, অতিডান-অতিবাম আর তালেবান সবাইকে নিয়ে ঐক্য করে বিএনপির আসন ৭টি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এখন সবাইকে নিয়ে ঐক্য করে মাঝেমধ্যে বলে ৩২ দল, কখনো ১২ দল, আবার কখনো বলে ২২ দল। আবার বলে ৫৪ দল। আসলে কত দলের যে বিএনপির জোট সেটা বলা মুশকিল। ২২ দল এবং ১২ দল মিলে ঢাকা শহরে এক জায়গায় সমাবেশ করলে সেখানে মানুষ পাওয়া যায় পঞ্চাশ জন। আর সাংবাদিক থাকে এক’শ জন। এই হচ্ছে তাদের সমাবেশ।
মির্জা ফখরুলকে নেতা বানাতে চান না বলে বিএনপির নির্বাচন ভীতির আরেকটি কারণ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান তো নির্বাচন করতে পারবেন না। তাই তারা নির্বাচনে গিয়ে মির্জা ফখরুলকে নেতা বানাতে চান না। বিএনপি’র পতাকাটা তারা মির্জা ফখরুল কিংবা অন্য কারো হাতে তুলে দিতে চাননা। সেই কারণেই তাদের নির্বাচন ভীতি পেয়ে বসেছে। নির্বাচন বানচাল করার জন্য অতীতে যেমন ষড়যন্ত্র করেছে এখনও সেই ষড়যন্ত্রের পথেই হাঁটছে বিএনপি।
তিনি বলেন, আপনারা নির্বাচনে যাবেননা, নির্বাচন বর্জন করবেন। আবার সরকারকে বিদায় দিতে চাইবেন, সেটিতো দেশ বিরোধী কাজ। সেই দেশ বিরোধী কাজ কাউকে করতে দেয়া হবেনা। আপনারা সরকারের বিদায় চান খুব ভালো কথা। আপনারা নির্বাচনে আসুন, নির্বাচনে এসে জনপ্রিয়তা যাচাই করুন। জনগণ যদি আপনাদেরকে ভোট দেই, তাহলে তো আপনারা ক্ষমতায় যেতে পারবেন।
দল ক্ষমতায় আসার পর যাদের আলস্য ধরেছে তাদের আলস্য ঝেড়ে ফেলার অনুরোধ জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামীলীগ রাজপথের দল এবং রাজপথ থেকে গড়ে উঠা নেতৃত্ব। আমরা জীবনকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনীতির পথে নেমেছি, ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য কিংবা শুধুমাত্র ক্ষমতায় থাকার জন্য রাজনীতি করিনা, জনগণের জন্য রাজনীতি করি। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থাকুক কিংবা না থাকুক রাজপথে সবসময় থাকবে। আগামী নির্বাচনে ইনশাল্লাহ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হবেন। এজন্যই ওদের মাথাটা খারাপ।
তিনি বলেন, ১৪ বছর যে উন্নয়ন হয়েছে সেই উন্নয়নের প্রচার করতে হবে নেতাকর্মীদের। ১৪ বছর আগের চিত্র আর এখনকার চিত্র মানুষকে দেখান। যদি মানুষকে উন্নয়নের চিত্র আমরা সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি মানুষ আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোন জায়গায় ভোট দেয়ার সুযোগ নাই।
অগ্নি সন্ত্রাসীদের ধরার জন্য মানুষের দাবি আছে উল্লেখ করে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তাদের ধরতে মাঝেমধ্যে পুলিশ অভিযান চালায়। প্রয়োজনে হুকুমদাতাদেরও ধরতে হবে। সমগ্র বাংলাদেশে পরিকল্পনা করে বিএনপি জামাত এবং মিত্ররা আবারো নৈরাজ্য সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কোন পাল্টা কর্মসূচি দেই নাই জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে চোর ডাকাতরা যেমন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, রাজনীতির নামে যারা অগ্নি সন্ত্রাস করেছে,জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে, মানুষের হাত-পায়ের রগ কাটে তারাও যাতে দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেটার সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং জনগণকে সাথে নিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করা সরকারি দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব আছে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইউনুছ গণি চৌধুরী,উত্তর জেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম রাশেদুল ইসলাম, উত্তর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তানভির হোসেন চৌধুরী তপু,সাধারন সম্পাদক রেজাউল করিম,উত্তর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদিকা বাসন্তি প্রভা পালিত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।